কম্পিউটার ভাইরাস কী? কম্পিউটার ভাইরাস কি বড় ধরণের ক্ষতি করতে পারে?
ভাইরাস কি? কম্পিউটার ভাইরাস কী? কম্পিউটার ভাইরাস কি বড় ধরণের ক্ষতি করতে পারে?
উত্তরঃ বিশ্বের ভাইরাস একটি অপ্রীতিকর, শব্দ যা বাহিরের বিভিন্ন উৎস হতে কম্পিউটারের মেমরিতে গোপনে প্রবেশ করে বিস্তার লাভ করে প্রোগ্রামকে অচল করে দেয়। এমনকি কম্পিউটারকেই নস্ট করে দিতে পারে। এজন্যই কম্পিউটার ভাইরাস একটি ক্ষতিকর প্রোগ্রাম। আরো বলা যায় যে, কম্পিউটার ভাইরাস হলো কতকগুলি অবৈধ নির্দেশের প্রোগ্রাম বা সেট। যে প্রোগ্রাম সুন্দর জিনিসকে ধ্বংস কারী হিসেবে নিজেকে অন্যান্যা প্রোগ্রামের সাথে সংক্রমণ ঘটায় এবং ক্রমে ক্রমে বিস্তার লাভ করে। যেসব ফাইলে সংক্রমণ ঘটেনি সেগুলিতেও সংক্রমণ ঘটায়। ভাইরাস নিজে নিজে বংশ বৃদ্ধি ঘটাতে পারে ফলে যত ক্ষণ সময় অবধি না তার কোড পূর্ণ হয় ততক্ষণ অবধি ইহা কম্পিউটারের ক্ষতি করতে পারে না। সুতরাং এই ভাইরাস তখনই ক্ষতিকর হয় যখন ইহা অপারেটিং সিস্টেমের সাথে প্রতিযোগিতা শুরু করে। ইংরেজি ভাইরাস শব্দ VIRUS এর পূর্ণ অর্থ হলো – VIRUS = Vital Information Resources Under Seize (ভাইটাল ইনফরমেশন রির্সোসেস আন্ডার সিজ) ভাইটাল ইনফরমেশন রির্সোসেস আন্ডার সিজ মানে হলো – “ গুরুত্বপূর্ণ উৎস গুলি বাজেয়াপ্ত করা হহয়েছে”। ‘ফ্রেড কোহেল নামের একজন গবেষক ভাইরাস নামকরণ করেন।কম্পিউটারে ভাইরাস আক্রান্তের লক্ষণ সমূহ আলোচনা করা হলোঃ কিভাবে বুঝবেন যে আপনার কম্পিউটারটি ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে? উত্তর হবে-
1. প্রোগ্রাম লোড হতে সময় বেশি লেগে যায়। যখন আপনার কম্পিউটার চালু করবেন তখন দেখবেন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি বা অনেক বেশি সময় লাগবে।
2. আপনার কম্পিউটারের তথ্য ধারণ করতে কম্পিউটারে হার্ড ডিস্ক লাগানো থাকে। 3. এই হার্ডডিস্ক এর ভিতর আলাদাভাবে তথ্য সংরক্ষণের জন্য পার্টিশন (Partition) করা থাকে সেই পার্টিশন নষ্ট করে ফেলে।
4. কম্পিউটারে রাখা ফাইলের কিছু কিছু অংশে অবাঞ্চিত চিহ্ন বা বার্তা দেখা দেয।
5. হঠাৎ ফাইল অদৃশ্য হয়ে যায় ফলে কম্পিউটার থেকে ডাটা হারিয়ে যায়। 6. কম্পিউটার সেট করা ঘড়ির টাইম অপ্রত্যাশিত ভাবে কমে যায়। 7. হার্ড ডিস্কে ব্যাড সেক্টর (Bad Sector) দেখা যায়। 8. ডকুমেন্ট প্রিন্ট করতে গেলে সময় বেশি লেগে যায়। 9. কোন ফাইল বা ডকুমেন্ট অন্য কোন হার্ড ডিস্কে বা মেমরিতে বা পেনড্রাইভে পার করতে গেলে মাঝে মাঝে স্পিড স্লো হয়ে যায়। আবার গতি বাড়ে বা অনেক সময় ডকুমেন্ট গুলি পারই হয় না। অনেক সময় কম্পিউটার হ্যাং হয়ে যায় ফাইল পার করতে গেলে। 10. কাজের সময় অপ্রত্যাশিত ম্যাসেজ দেখা দেয়। 11. কাজের মধ্যে হঠাৎ করে কম্পিউটার বন্ধ হয়ে যায় বা কম্পিউটার রিস্টার্ট নেয় অথবা হ্যাং হয়ে যায়। 12. এছাড়াও কম্পিউটারের বায়োস এর ডাটা মুছে কম্পিউটারকেই অচল করে ফেলে ইত্যাদি।
কম্পিউটারেভাইরাস কিভাবে কোথায় থেকে আসে?
উত্তর হবে – 1. ভাইরাস ফ্লপি ডিস্ক থেকে আসে। 2. সিডি ডিভিডি থেকে আসে। 3. পেনড্রাইভ, মেমরি ইত্যাদি থেকে আসে। 4. পাইরেটেড বা কপি করা সফটওয়্যার থেকে আসে। 5. ইন্টারনেট থেকে ফাইল ডাউনলোড দেওয়ার সময় আসে। 6. এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে সার্ভারের মাধ্যমে ডাটা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে ভাইরাস আসে। 7. ই-মেইল এর মাধ্যমেও ভাইরাস আসে।ভাইরাসের প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করা হইলঃ কম্পিউটারে বিভিন্ন প্রকার ভাইরাস পরিলক্ষিত হয়। তবে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ভাইরাস পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। তবে এখন অবধি প্রাপ্ত ভাইরাস গুলির কত গুলি আলোচনা করা হলোঃ I. ফাইল ভাইরাস
II. বুট সেক্টর ভাইরাস III. মাল্টিপারপাস ভাইরাস IV. প্রোগ্রাম ভাইরাস
V. ট্রজান হর্স ফাইরাস
VI. কমান্ড পারপাস ভাইরাস
VII. ম্যাক্রো ভাইরাস
VIII. জেনারেল পারপাস ভাইরাস
IX. ওভাররাইট ভাইরাস
X. স্টিলথ ভাইরাস
XI. বেইন ভাইরাস
XII. পার্টিশন সেক্টর ভাইরাস
XIII. স্টোনড ভাইরাস বিভিন্ন ভাইরাসের বিবরণঃ
ক. ফাইল ভাইরাসঃ এই শ্রেনীর ভাইরাস সাধারণত ফাইল এক্সিউটেবল প্রোগ্রাম ফাইল সমূহকে আক্রমণ করে। এই ফাইল ভাইরাস ভাইরাস .EXE এবং .COM যুক্ত ফাইল গুলি আক্রান্ত করে। .EXE এবং .COM এই ধরণের প্রোগ্রাম চালু করলে ভাইরাস এই প্রোগ্রাম গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে পরে এর ডুপ্লিকেট হিসেবে বা প্রতিলিপি হিসেবে কাজ করে এবং ফ্লপি ডিস্কে বা অন্য ফাইলে কপি করে।
খ. ট্রজান হর্স ভাইরাস গ্রিক পৌরাণিক ট্রজান ঘোড়ার নাম অনুসারে এই ভাইরাসে নাম রাখা হয় ট্রজান হর্স। এই ট্রজান হর্স ভাইরাস আসলেই খুব মারাত্মক। যদিও এটি উপকারের মত আচরণ করে তবুও। এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত ফাইল চালু করলে নস্ট করে ফেলতে পারে। আবার কখনো কখনো হার্ড ডিস্ক ফরম্যাট করে ফেলতে পারে।
গ) বুট সেক্টর ভাইরাসঃ বুট সেক্টর ভাইরাস কম্পিউটারের হার্ড ডিস্কের ১টি অংশ। কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম চালু করলে এটি কিভাবে কাজ করবে তা নিয়ন্ত্রণ করে।প্রথমে এগুলি মেমরিতে নিজেদের স্থাপন করে এরপর অরিজিনাল বুট সেক্টরকে সরিয়ে দিয়ে নিজের বুট সেক্টরকে প্রতিস্থাপন করে। মুলত এই ধরণে ভাইরাস কম্পিউটারের বুট সেক্টরকে ধ্বংস করে ফেলে।
ঘ. কমান্ড পাসপাস ভাইরাসঃ এই ভাইরাস MS DOS.SYS, I/O, SYS, IBM DOS.COM ফাইল সমূহ এই ভাইরাস দিয়ে নস্ট করা হয়। বুট সিস্টেম চালু করার পর এই ভাইরাস কমান্ড পাসপাস ভাইরাস কম্পিউটারে ঢুকে বিশেষ ক্ষতি করে থাকে।
ঙ. পার্টিশন সেক্টর ভাইরাসঃ
পার্টিশন সেক্টর ভাইরাস হলো হার্ড ডিস্কের প্রথম সেক্টর। এটি ডিস্ক সম্পর্কিত তথ্য ধারণ করে। কম্পিউটার চালু করলে পার্টিশন সেক্টর রিড করে এবং কোড নির্বাহ করে থাকে।
চ. জেনারেল পারপাস ভাইরাসঃ জেনারেল পারপাস ভাইরাস গোপনে কম্পিউটারে ঢুকে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে যা দূর করা সম্ভব হয় না।
ছ. কম্পানিয়ন ভাইরাসঃ এই কম্পানিয়ন ভাইরাস কম্পিউটারের .EXE এক্সটেনশনযুক্ত ফাইল COM ফাইলে রুপান্তর করে।
জ. স্টিলথ ভাইরাসঃ এই স্টিলথ ভাইরাসটি পার্টিশন ভাইরাসের একটি শ্রেনী। এ জাতীয় ভাইরাস খুবই মারত্মক। কারণ এই ভাইরাস নিজেদের অদৃশ্য করে ফেলে। ফলে এদের চিহ্নিত করা যায় না এবং দূর করা যায় না। স্টিলথ ভাইরাস ফাইলের জায়গায় নিজেদের স্থান দখল করে কিন্তু ফাইলের সংখ্যা কিলোবাইট বা মেগাবাইট বৃদ্ধি পায় না।
ঝ. ম্যাক্রো ভাইরাসঃ ম্যাক্রো ফাইরাস একটি সাধারণ ভাইরাস।যা ফাইলকে আক্রমন করে থাকে। এটি মাইক্রোসফট এর ফাইল আক্রমণ করে থাকে এবং মাইক্রোসফট এর ডকুমেন্টের মত ডকুমেন্ট ধারণ করে। এটা কম্পিউটারে প্রায়ই দেখা যায়। এই ম্যাক্রো ভাইরাসই প্রথম ভাইরাস যা ফাইলকে আক্রান্ত করে। ঞ. ওভাররাইট ভাইরাসঃ ওভাররাইট ভাইরাস নিজস্ব কোড দ্বারা ফাইলকে ওভার রাইট করে। ফলে এ ফাইলটি অচল হয়ে পড়ে। তবে এই ভাইরাস দ্রুত ছড়ায় না।
ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়সমূহঃ কি কি উপায়ে কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধ করা যায় তা নিচে দেওয়া হলোঃ
১) ডিস্ক ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার (Antivirus Softwareদ্বারা স্ক্যান করে নিতে হবে।
২) প্রত্যেকটি ফাইল ও ফোল্ডার নিয়মিত স্ক্যান করে নিতে হবে।
৩) কম্পিউটারকে এমন ভাবে ক্ষমতা প্রদান করতে হবে যে, কম্পিউটার বুটিং হওয়ার সময় যেন এন্টিভাইরাস স্ক্যান করে নিতে পারে।
৪) পাইরেটেড বা কপি করা সফটওয়্যার ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫) একান্ত প্রয়োজন না হলে কোন ফ্লপি ডিস্ক বা অন্যান্য ডিস্ক ব্যবহার না করা।
৬) যে কোন ই-মেইল গ্রহণের ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্ভন করা এবং স্ক্যান করা।
৭) প্রায় সময় আপডেট এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা।
৮) যে কোন ধরণের গেমস থেকে সাবধানে থাকা। কারণ, গেমস হলো ভাইরাসের সব থেকে বড় উৎস। ৯) প্রতিদিন কাজের শেষে ফাইলে ব্যাক আপ রাখা।
১০) সকলকে ফাইরাস প্রতিরোধে উদ্বুদ্ধ করা।